"থাবা বাবা" রাজীব হায়দার হত্যা মামলার রায় বহাল

(অনুসন্ধানী আবাহন)

২০১৩ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারী থাবাবাবা রাজীব হায়দারকে কুপিয়ে হত্যা করার মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশের গোটা রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের মোড় ঘুরিয়ে নেয়ার সূচনা হয়েছিলো। এর আগে পর্যন্ত বাংলাদেশে নাস্তিক নিয়ে সামাজিক স্তরে মানুষের মাথাব্যাথা ছিলো না, রাজনৈতিক স্তরেও না। আমরা জানতাম, অন্তত আওয়ামী লিগ আমাদের পাশে আছে, বিপদ বলে কিছুই কখনো সেভাবে ভাবিনি। অনলাইনে হালকা হুমকি ধামকি, সে তো হয়েই থাকে। কিন্তু কি আশ্চর্য হয়ে দেখলাম থাবাকে খুন করে শাহবাগকে নাস্তিকের কর্মসূচী বলা হলো, আওয়ামী লীগকে নাস্তিক তোষক বলা হলো, আর আওয়ামী লীগ রাতারাতি পালটে গেল। রাতারাতি তারা ইসলামিস্ট দল হয়ে গেল। এক রাতের মধ্যে রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ জারী করে কুখ্যাত ৫৭ ধারায় পরিবর্তন নিয়ে এসে এটাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার শুরু করলো। থাবার খুনীদের ধরার চেষ্টার বদলে অনলাইন এক্টিভিস্ট গ্রেফতার করা হলো ৫৭ ধারায়। জানিয়ে দিলো, দেশ চলবে মদিনা সনদ অনুযায়ী, এখানে নাস্তিকের কোন স্থান নেই। থাবাবাবা বেঁচে থাকতে আঘাত দিয়ে মানুষের মন বদলাতে চেয়েছিলো, কিন্তু মৃত থাবাবাবা গোটা সমাজ ও দেশের মুখোশ খুলে দিলো, সবাইকে আয়নার সামনে দাঁড় করিয়ে দিলো।

কারা এবং কেন খুন করেছে ,জানা গেছিলো প্রায় সাথে সাথেই। ধরাও পড়েছিলো প্রায় সবাই। কিন্তু প্রায় এক বছর সময় নিয়ে ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে অভিযোগপত্র দাখিল করে পুলিশ। এরপরে শুরু হয় তদন্ত নাটক, যার শেষ হয় প্রায় দুবছর পরে। অবশেষে ২০১৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর নিম্ন আদালতের রায়ে অভুযুক্তদের দুজনের মৃত্যুদন্ড ও ছয় জনের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ডের রায় হয়। আসামিরা উচ্চ আদালতে বেকসুর খালাসের আপিল করেছিলো, যার শুনানি শুরু হয় গত বছরের ৭ নভেম্বর। অবশেষে আজ রায় ঘোষনা করলো। আসামিদের আপিল নাকচ করে দিয়ে নিম্ন আদালতের রায়, অর্থাৎ দুইজনের ফাঁসি এবং ছয়জনের কারাদন্ড বহাল রেখেছে উচ্চ আদালত। আমরা রায় পেয়েছি, কিন্তু এই রায় শুধু শাস্তি নিশ্চিত করে, সামাজিক ও রাজনৈতিক আশংকা থেকে আমাদের মুক্ত করে না। এখনো অভিজিত রায়, ওয়াশিকুর বাবু, অনন্ত বিজয়, নিলয় নীল সহ আরো অনেকের হত্যাকান্ডের বিচার লালফিতে বন্দী। এবং ছেলেমেয়েদের চরিত্র গঠনে এবং সুষ্ঠু-সুন্দরভাবে গড়ে ওঠার ক্ষেত্রে শরিয়াভিত্তিক আলোচনা করার জন্য দেশের ইমামদের প্রতি আদালতের আহ্বানের কথায় শংকাটা আরো জোরালো হয়ে উঠছে।

http://bangla.bdnews24.com/bangladesh/article1313080.bdnews

মন্তব্যসমূহ