আবার জঙ্গলে - পর্ব ২

 (দেবজ্যোতি মিত্র)

রাতে মদের ঘোরে, মাতালের প্রলাপ ভাবতে ভাবতে বাড়ি ঢুকলাম। পরেরদিন সকালে আবার আড্ডায় গেলাম, এক আধ রাউন্ড গাঁজাও কারিগর (আমাদের এক বন্ধু, গাঁজা বানাবার দক্ষতার জন্য এই উপাধি লাভ করেছিলো) বানিয়ে ফেললো, এগারোটা সাড়ে এগারোটা নাগাদ এক মক্কেল এসে পৌঁছলো, প্রথমেই দেরি করে আসার জন্য সম্মিলিত গালাগালের সম্মুখীন হলো বেচারা, কি ব্যাপার না, আমরা সকাল থেকে ব‍্যোম হয়ে ভোগে যাচ্ছি আর তুমি শালা ভদ্র সেজে ঘুরে বেড়াচ্ছ, পুরো সাম‍্যবাদী মনোভাব, এসো সকলে একসাথে ভোগে যাই। অবস্থা একটু থিতু হবার পরে ,ও গতরাতের আলোচিত পালামৌ ভ্রমণের প্রসঙ্গ উত্থাপন করলো, আবার হৈ চৈ আরম্ভ হলো, কোন রাস্তায় পালামৌ যাওয়া যায়, কেন পৃথু তো প্রায় ই জীপ নিয়ে রাঁচি যায়, তাহলে আর কি চলো রাঁচি, টাইম টেবিল উল্টে দেখা গেলো হাওড়া থেকে সাউথ ইস্টার্ন রেলের রাঁচি এক্সপ্রেস রাত সাড়ে নটায়, কিন্তু জঙ্গল যাত্রাতো আর মদ ছাড়া হয় না, কে কে যাবি ভাই, মাথা গুনে দেখা গেলো আটজন হয়ে গেছি, তিনটে পনেরোর কর্ড লাইন লোকালে হাওড়া যাবো বলে ঠিক হলো, ছ ফুটিয়া বিবেকের উপর ভার পরলো আটটা রামের পাঁইটের প্রারম্ভিক স্টকের ব‍্যবস্থা করার। মা সেদিন অফিস যায় নি, দেড়টায় বাড়ি ফিরে মায়ের গা ঘেঁষে বসলাম, যদিও আমি মায়ের গা ঘেঁষাই ছিলাম, কিন্তু মায়ের চোখ বলে কথা , কি ব‍্যাপার বলতো, কি ধান্দা তোর, আমতা আমতা করে বললাম আমরা বেতলা যাবো,আমরা মানে, নামগুলো বললাম, মা সুলভ চিন্তায় চিন্তিত আমার মায়ের স্বাভাবিক চিন্তাই ছিলো, আমার এতো ভালো ছেলেটা বন্ধুদের পাল্লায় পড়ে নেশাখোড় হয়ে গেছে, লিস্টের দু একজন ছাড়া সবগুলোই তো ব‍্যাডবয়, মায়ের মুখের রেখা পাল্টে গেলো, চরম অসম্মতি প্রকাশ পেলো, অনেক বুঝিয়ে অবশেষে শ তিনেক মতো টাকা নিয়ে জামাকাপড় গুছিয়ে হাঁফাতে হাঁফাতে সুবলের দোকানে যখন এলাম তখন প্রায় তিনটে, কিছু ছেলে স্টেশন চলে গেছে টিকিট কাটতে, কয়েকজন অপেক্ষা করছে আমার জন্য, যাওয়ামাত্র বিরাট গাল, ট্রেন না পেলে যে আর কি কি অপেক্ষা করছে আমার জন্য কে জানে?

যাইহোক ট্রেন পাওয়া গেলো, আমার ফাঁড়া কাটলো। হাওড়া পৌঁছে খেয়েদেয়ে তেরো চোদ্দো নম্বর প্ল‍্যাটফর্মে অপেক্ষায় থাকলাম, ট্রেন প্ল‍্যাটফর্মে দেবার,কারণ ভরসাতো জেনারেল কম্পার্টমেন্ট আর জায়গা দখলের লড়াই হাওড়া স্টেশনের কুখ্যাত কুলিদের সাথে, ট্রেন দিলো আমাদের মধ‍্যে বলশালীরা এগিয়ে গেলো সিট দখলের লড়াইয়ে, ঠেলেঠুলে যখন ট্রেনে উঠলাম তখন দেখি আমাদের খান পাঁচেক ছেলের সাথে কুলিদের হাতাহাতি হবার উপক্রম, অনেক ঝামেলা ঝঞ্ঝাটের পর খান পাঁচেক বার্থ দখল হলো, ট্রেন নড়লো আটজন পিরথু দাদা চললো পালামৌয়ের জঙ্গলে।


ট্রেন গতি নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তন্ময় আর নাড়ু একটা পাঁইট নিয়ে ঢুকে পড়লো বাথরুমে, একে একে ঢুকি আর এক একটা বোতল ভাঙার শব্দ পাই বাথরুমের জানালা দিয়ে, আটটা পাঁইট শেষ। আবার সাময়িক বিরতি, একটু বিশ্রাম দেবেন তো না কি।


(চলবে)

মন্তব্যসমূহ