জঙ্গি দমনে চাই প্রশিক্ষিত কাউন্টার টেরিজম ইউনিট

(অনুসন্ধানী আবাহন)

ক্রমবর্ধমান জঙ্গী হামলার হুমকির মুখে বস্তুত বাংলাদেশ সসরকারের দদশা একেবারেই নতজানু। সর্বোচ্চ সামরিক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্যারা কমান্ডো ইউনিটকে ব্যবহার করা হচ্ছে, হাতের বাইরে চলে যাওয়া যে কোন ঘটনায়। কিন্তু একটা ব্যাপার মাথায় রাখতে হবে , প্যারা কমান্ডো ইউনিটের কাজ, শত্রু এলাকায় ঢুকে শত্রুর সম্ভাব্য ক্ষতিসাধন। জিম্মি উদ্ধার বা এজাতীয় বিষয়ে জেনারেল ট্রেইনিং থাকতে পারে, কিন্তু প্যারা ইউনিট কোন এন্টি টেরোরিস্ট ইউনিট নয়, তাদের সেইভাবে স্পেশালাইজড ট্রেইনিং দেয়াও হয় না। নেভির স্পেশাল ওয়ারফেয়ার ডাইভিং এন্ড স্যালভেজ ইউনিটও (SWADS) একটি বিশেষায়িত প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত টিম, কিন্তু প্যারা ইউনিট এর মতই এরাও যুদ্ধ ও আক্রমণ ভিত্তিক। বাকি রইলো স্পেশাল ওয়েপনস এন্ড ট্যাকটিক্স (SWAT)। এই ইউনিটকে তৈরী করা হয়েছিলো ২০০৯ সালে, বেসামরিক স্পেশাল অপারেশনস এর জন্যে। কিন্তু বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের ধারণা ছিলো, একটেল এর ভিওআইপি ইকুইপমেন্ট জব্দ বা ইলেকশন ডিউটিতে সেজেগুজে শো অফ করাই হয়তো স্পেশাল অপারেশনস। যে কারণে এমনকি এই স্পেশালাইজড ইউনিটকেও কাউন্টার টেরোরিজম এ প্রশিক্ষিত করা হয় নি। যদিও বিশ্বের অনেক দেশেই SWAT কে টেরোরিজম এর বিরুদ্ধে ফার্স্ট রেসপন্স টিম হিসেবে প্রশিক্ষিত করা হয়।

কেন বারবার উল্লেখ করছি কাউন্টার টেরোরিজম ট্রেইনিং এর কথা, প্রশ্ন করতেই পারেন। তাহলে সন্ত্রাস দমন অভিযানকে ছোট ছোট ভাগে ভাংতে হবে:
* অবস্থান গ্রহণ ও পরিস্থিতি নিরিক্ষণ (Positioning and Reconnaissance)
* জিম্মি উদ্ধার ও বেসামরিক নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ
* সন্ত্রাসী দমনের জন্যে আক্রমণ
* সন্ত্রাসীদের নিষ্ক্রিয়করণ এবং সম্ভাব্য সংখ্যক জীবিত পাকড়াও নিশ্চিতকরণ

কেন কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট হিসেবে বর্তমান ইউনিটগুলো প্রায় অকার্যকর তার কারণ আপনারা গত কয়েকমাস ধরেই দেখছেন। তবু বিশ্লেষন করি। পজিশনিং এবং রেকন এর মত প্রাথমিক পদক্ষেপ নেয়ার ব্যাপারে হোলি আর্টিজান এর অপ্রস্তুত অবস্থা ইদানিং খানিকটা কেটেছে। হোলি আর্টিজান এর ঘটনায় জিম্মিদের ব্যাপারে কিছুই করা যায় নি। সিলেটের ঘটনায় যদিও আটকে পড়াদের বের করা গেছে, কিন্তু সাধারণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায় নি। যেখানে জঙ্গী দমন অভিযান চলছে সেখানে একটা এলাকা জুড়ে বৃত্তাকার নো এন্ট্রি জোন না তৈরী করে সকল স্তরের মানুষের আনাগোনা বজায় রাখা হয়েছিলো। এতেই প্রমাণিত হয় কাউন্টার টেরোরিজম এর প্রাথমিক প্রশিক্ষণটাও না থাকায় এক্সপেরিয়েন্স গ্যাদারিং এর ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে। সোয়াট এবং প্যারা কমান্ডো উভয় পক্ষেই আমরা দেখতে পাচ্ছি শুধু মাত্র কেভলার ভেস্ট এবং বেরেট পরিহিত অবস্থায়। কিন্তু এধরণের জঙ্গী বা সন্ত্রাসীরা আইইডি (Improvised Explosive Devices) ব্যবহার করে বলে, বিষ্ফোরণ এর সপ্লিন্টার'এ এসল্ট ইউনিট সদস্যদের আহত হবার সম্ভাবনা প্রবল হয়। সিলেটে আজকেই তিনজন সেনা সদস্য আহত হয়েছেন আইইডি সপ্লিন্টার'এ। এধরণের পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্যেই পৃথিবীব্যাপী বহুদিন ধরে ট্যাকটিকাল আর্মার ভেস্ট ও লেগগার্ড ব্যবহার করে আসছে সোয়াট বা অন্যান্য কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটগুলো। এই বডি আর্মার বাংলাদেশের তথাকথিত কাউন্টার টেরোজিজম ইউনিট বা সোয়াট তো দূরে থাক, প্যারা কমান্ডোরও নেই (কমান্ডো ইউনিট এ থাকার কথাও নয়, কারণ ওদের ট্রেইনিং এবং উদ্দেশ্য আলাদা)। অথচ যুক্তরাষ্ট্রে এমনকি রায়ট পুলিসও ফুল ট্যাক্টিকাল বডি স্যুট ব্যবহার করে। আমরা বরাবর এসল্ট অপারেশন বলতে দেখতে পাচ্ছি, গান ব্লেজিং, র‍্যাপিড ফায়ারিং এবং কিলিং। লাকিলি হয়তো একেকসময় দু চারজন জঙ্গী জীবিত ধরা পড়ছে, যাতে এসল্ট ইউনিটের কৃতিত্বের চাইতে জঙ্গীদের সুইসাইড এর ব্যর্থতাই মূল কারণ। কমান্ডো ইউনিট তো লেথাল অপারেশন এর জন্যেই ট্রেইনড, তাদের থেকে জীবিত জঙ্গী আশা করাই ভুল। কিন্তু আমাদের সোয়াটকে ফ্ল্যাশ ব্যাং গ্রেনেড, স্মোক গ্রেনেড, বিন ব্যাগ এবং মিনিমাম বা সেমি-লেথাল উইপনারি ব্যবহারের কোন ট্রেইনিং দেয়া হয় নি। না তাদের আছে এধরণের পর্যাপ্ত ইকুইপমেন্ট। ফলে একদিকে নিজেদের নিরাপত্তা নেই, আরেকদিকে প্রশিক্ষণ ও সরঞ্জাম এর চুড়ান্ত ঘাটতি, এই দুয়ে মিলে সঠিকভাবে জঙ্গী দমন ও গ্রেফতার অভিযান সম্ভব হচ্ছে না। আর জীবিত না ধরতে পারলে, তথ্য উদ্ধারের কোনই সুযোগ থাকে না।

সরকারের উচিৎ অবিলম্বে বর্তমানের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট নামক ছেলেভুলানো ভাবনায় ভুলে না থেকে, জরুরী ভিত্তিতে সোয়াট এর জন্যে পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ ও সরঞ্জাম এর ব্যবস্থা করা। সোয়াটকে ফার্স্ট রেসপন্স ইউনিট হিসেবে রেখে, বিভিন্ন বাহিনী (বা নির্দিষ্ট বাহিনী) থেকে বাছাইকৃত সদস্যদের নিয়ে ডেডিকেটেড কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট গঠন করে তাদেরকে পর্যাপ্ত ইন্টেন্সিভ ট্রেইনিং ও ইকুইপমেন্ট নিশ্চিত করা। জঙ্গী হামলা এখন আর এদেশে কোন আশঙ্কা বা অমূলক গল্প নয়, কঠোর বাস্তবতা। নিজেদের তাগিদেই সরকারের উচিৎ সঠিকভাবে ভাবা ও তার এক্সিকিউশন। নগর পুড়লে দেবালয় এড়ায় না।

মন্তব্যসমূহ